চতুর্থ দৃশ্য
কারা-প্রাচীরের সম্মুখের পথ
[এক দিক দিয়া রমেশ প্রবেশ করিল ও অপর দিক দিয়া বেণী—তাহার মাথায় ব্যান্ডেজ বাঁধা—স্কুলের হেডমাস্টার বনমালী ও কয়েকজন ছাত্র। পশ্চাতে বেণীর অনুগত আরও দুই—চারিজন লোক]
বেণী। (রমেশকে আলিঙ্গন করিয়া) রমেশ, ভাই রে, নাড়ীর টান যে এমন টান এবার তা টের পেয়েচি। রমা যে আচায্যি হারামজাদাকে হাত কোরে এত শত্রুতা করবে, লজ্জা-শরমের মাথা খেয়ে নিজে এসে মিথ্যে সাক্ষী দিয়ে এত দুঃখ দেবে, সে কথা জেনেও যে জানিনি, ভগবান তার শাস্তি আমাকে দিয়েচেন। জেলের মধ্যে তুই বরং ছিলি ভাল ভাই, বাইরে থেকে এই ক’টা মাস আমি যে তুষের আগুনে জ্বলে-পুড়ে গেছি।
[রমেশ হতবুদ্ধির মত কি যে করিবে ভাবিয়া পাইল না।
বনমালী ও ছেলেরা অগ্রসর হইয়া তাহার পায়ের ধূলা লইল]
বেণী। (কাঁদিয়া ফেলিয়া) দাদার ওপর অভিমান রাখিস নে ভাই, বাড়ি চল্। মা কেঁদে কেঁদে দু’চক্ষু অন্ধ করবার যোগাড় করেচেন। আমরা শুধু প্রাণে বেঁচে আছি রমেশ।
রমেশ। (বেণীর মাথার ব্যান্ডেজটা হাত দিয়া দেখাইয়া) এ কি বড়দা, মাথা ভাঙলো কি করে?
বেণী। শুনে আর কি হবে ভাই, আমি কাউকে দোষ দিইনে। এ আমার নিজেরই কর্মফল,—আমারই পাপের শাস্তি।—জানিস ত রমেশ, এই আমার জন্মগত দোষ যে মনে এক, মুখে আর কিছুতে করতে পারিনে। মনের ভাব আর পাঁচজনের মত ঢেকে রাখতে পারিনে বলে কত শাস্তিই যে ভোগ করতে হয়,—কিন্তু তবু ত আমার চৈতন্য হয় না। দোষের মধ্যে সেদিন কাঁদতে কাঁদতে বলে ফেলেছিলাম, রমা, আমরা তোর কাছে কি অপরাধ করেচি যে ভাইকে আমার জেলে দিলি! জেল হয়েচে শুনলে মা যে একেবারে প্রাণ বিসর্জন করবেন। আমরা ভায়ে ভায়ে সম্পত্তি নিয়ে ঝগড়া করি, যা করি, তবু ত সে আমার ভাই। তুই একটি আঘাতে আমার ভাইকে মারলি,—আমার মাকে মারলি!—রমেশ, সেদিন রমার সে উগ্রমূর্তি মনে হলে আজও হৃদ্কম্প হয়। বললে, রমেশের বাপ আমার বাপকে জেলে দিতে যায়নি? পারলে ছেড়ে দিত বুঝি?
রমেশ। হাঁ, রমার মাসীর মুখেও একথা শুনছিলাম।
বেণী। এই হোলো তার জাতক্রোধ। কিন্তু মেয়েমানুষের এত দর্প আমারও সহ্য হল না। আমিও রেগে বলে ফেললাম, আচ্ছা, ফিরে আসুক সে, তার পরে এর বিচার হবে। কিন্তু খুন করা যে তার অভ্যেস ভাই। তোমাকে খুন করতে আকবর লেঠেলকে পাঠিয়েছিল মনে নেই? কিন্তু তোমার কাছে ত চালাকি খাটেনি—তুমিই উলটে শিখিয়ে দিয়েছিলে! কিন্তু আমাকে খুন করা আর শক্ত কি?
রমেশ। তার পরে?
বেণী। তার পরে কি আর মনে আছে ভাই? কে কিসে করে যে আমাকে হাসপাতালে নিয়ে গেল, সেখানে কি হল, কে দেখলে কিছুই জানিনে। এ যাত্রা যে রক্ষে পেয়েচি সে কেবল মায়ের পুণ্যে। এমন মা কি আর আছে রমেশ!
[রমেশের মুখে ও মনের মধ্যে কত কি যে হইতে লাগিল
তাহার নির্দেশ নাই,—কিন্তু সে একটা কথাও কহিল না]
বেণী। গাড়ি তৈরি ভাই। আর দেরি নয়,—বাড়ি চল্। মায়ের কাছে তোরে একবার পৌঁছে দিয়ে আমি বাঁচি।
রমেশ। চলুন। জেলের মধ্যেই শুনেছিলাম রমা নাকি বড় পীড়িত?
বেণী। ভগবানের দণ্ড রমেশ—এ যে তাঁরই রাজ্য, এ কি সবাই মনে রাখে? জগদীশ্বর! চল ভাই, ঘরে চল।
[সকলের প্রস্থান]
All Books
Subscribe to:
Post Comments (Atom)
Popular Books
-
প্রথম অঙ্ক দ্বিতীয় গর্ভাঙ্ক দুদিন পরে পথ্যি কোরেই আজ আবার কেন সেলাই নিয়ে বসলি মা? একটু শুগে না। সেলাই-এর প্রতি দৃষ্টি নিবদ্ধ রাখিয়াই কহিল, দ...
-
একুশ অরুণের মুখে শাশুড়ীর ওই দুর্দান্ত অসুখের কথা শুনে কমলার দু’চক্ষু ছলছল করে এল। এবং বিশেষ করে সে যখন জানালে যে, জামাইবাবু নিরুদ্দেশ, হয়ত ব...
-
পঞ্চম অঙ্ক প্রথম দৃশ্য বিজয়ার বসিবার ঘর [পরেশ প্রবেশ করিল। তাহার পরিধানে চওড়া পাড়ের শাড়ী, গায়ে ছিটের জামা, গলায় কোঁচানো চাদর, কিন্তু খালি পা...
-
‘নারীর মূল্য’র ভূমিকা ১৩২০ সালের ‘যমুনা’ মাসিকপত্রে ‘নারীর মূল্য’ প্রবন্ধগুলি ধারাবাহিকরূপে যখন প্রথম প্রকাশিত হয়, তখন আমরা এগুলি গ্রন্থাকার...

Labels
- অগ্রন্থিত রচনা
- অনুপমার প্রেম
- অনুরাধা
- অন্তর্যামী
- অভাগীর স্বর্গ
- অরক্ষণীয়া
- আধাঁরে আলো
- আলো ও ছায়া
- একাদশী বৈরাগী
- কাশীনাথ
- কোরেল
- গৃহদাহ
- চতুর্থ অঙ্ক
- চতুর্থ পর্ব
- চন্দ্রনাথ
- চরিত্রহীন
- ছবি
- ছেলেধরা
- জাগরণ
- তরুণের বিদ্রোহ
- তৃতীয় অঙ্ক
- তৃতীয় পর্ব
- দত্তা
- দর্পচূর্ণ
- দেনা পাওনা
- দেবদাস
- দ্বিতীয় অঙ্ক
- দ্বিতীয় অধ্যায়
- দ্বিতীয় পর্ব
- নব-বিধান
- নারীর মূল্য
- নিষ্কৃতি
- পঞ্চম অঙ্ক
- পথ-নির্দেশ
- পথের দাবী
- পন্ডিতমশাই
- পরিণীতা
- পরিত্যক্ত
- পরেশ
- পল্লী-সমাজ
- প্রথম অঙ্ক
- প্রথম অধ্যায়
- প্রথম পর্ব
- বড়দিদি
- বামুনের মেয়ে
- বাল্য-স্মৃতি
- বিচার
- বিজয়া
- বিন্দুর ছেলে
- বিপ্রদাস
- বিরাজবৌ
- বিলাসী
- বৈকুণ্ঠের উইল
- বোঝা
- মন্দির
- মহেশ
- মামলার ফল
- মেজদিদি
- রমা
- রামের সুমতি
- লালু
- শুভদা
- শেষ প্রশ্ন
- শেষের পরিচয়
- শ্রীকান্ত
- ষোড়শী
- সতী
- স্বদেশ ও সাহিত্য
- স্বামী
- হরিচরণ
- হরিলক্ষ্মী

Labels
- অগ্রন্থিত রচনা
- অনুপমার প্রেম
- অনুরাধা
- অন্তর্যামী
- অভাগীর স্বর্গ
- অরক্ষণীয়া
- আধাঁরে আলো
- আলো ও ছায়া
- একাদশী বৈরাগী
- কাশীনাথ
- কোরেল
- গৃহদাহ
- চতুর্থ অঙ্ক
- চতুর্থ পর্ব
- চন্দ্রনাথ
- চরিত্রহীন
- ছবি
- ছেলেধরা
- জাগরণ
- তরুণের বিদ্রোহ
- তৃতীয় অঙ্ক
- তৃতীয় পর্ব
- দত্তা
- দর্পচূর্ণ
- দেনা পাওনা
- দেবদাস
- দ্বিতীয় অঙ্ক
- দ্বিতীয় অধ্যায়
- দ্বিতীয় পর্ব
- নব-বিধান
- নারীর মূল্য
- নিষ্কৃতি
- পঞ্চম অঙ্ক
- পথ-নির্দেশ
- পথের দাবী
- পন্ডিতমশাই
- পরিণীতা
- পরিত্যক্ত
- পরেশ
- পল্লী-সমাজ
- প্রথম অঙ্ক
- প্রথম অধ্যায়
- প্রথম পর্ব
- বড়দিদি
- বামুনের মেয়ে
- বাল্য-স্মৃতি
- বিচার
- বিজয়া
- বিন্দুর ছেলে
- বিপ্রদাস
- বিরাজবৌ
- বিলাসী
- বৈকুণ্ঠের উইল
- বোঝা
- মন্দির
- মহেশ
- মামলার ফল
- মেজদিদি
- রমা
- রামের সুমতি
- লালু
- শুভদা
- শেষ প্রশ্ন
- শেষের পরিচয়
- শ্রীকান্ত
- ষোড়শী
- সতী
- স্বদেশ ও সাহিত্য
- স্বামী
- হরিচরণ
- হরিলক্ষ্মী

No comments:
Post a Comment